মমিনুল ইসলাম মোল্লা: শিক্ষক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট – কুমিল্লার এক নিবেদিতপ্রাণ চিন্তাশীল ব্যক্তিত্ব

মমিনুল ইসলাম মোল্লা: শিক্ষক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট – কুমিল্লার এক নিবেদিতপ্রাণ চিন্তাশীল ব্যক্তিত্ব

 মমিনুল ইসলাম মোল্লা: শিক্ষক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট – কুমিল্লার এক নিবেদিতপ্রাণ চিন্তাশীল ব্যক্তিত্ব


স্টাফ রিপোর্ট:

মমিনুল ইসলাম মোল্লা কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার একজন প্রগতিশীল শিক্ষক, অভিজ্ঞ সাংবাদিক এবং সমাজসচেতন কলামিস্ট হিসেবে পরিচিত। তাঁর লেখালেখি ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে উঠে আসে স্থানীয় ইতিহাস, শিক্ষা, মানবিকতা এবং সাংবাদিকতার প্রতি গভীর দায়বদ্ধতা।


তাঁর সাংবাদিকতা জীবনের সূচনা ঘটে ১৯৮৯ সালে এসএসসি পরীক্ষার পর, যখন তিনি “আমোদ” পত্রিকায় আবেদন করেন। বড় ভাইয়ের উৎসাহে তিনি সংবাদপত্রের প্রতি আগ্রহী হন এবং “নতুন পত্রিকার গন্ধই যেন আলাদা” — এই অনুভূতি তাঁকে লেখালেখির জগতে টেনে আনে। তাঁর প্রথম রিপোর্ট প্রকাশের অভিজ্ঞতা তাঁকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে এবং এরপর থেকে তিনি নিয়মিতভাবে স্থানীয় সংবাদ ও বিশ্লেষণধর্মী লেখা প্রকাশ করতে থাকেন।


একজন শিক্ষক হিসেবে তিনি শুধু পাঠদানেই সীমাবদ্ধ নন, বরং শিক্ষার্থীদের নৈতিকতা, মানবিকতা ও সামাজিক দায়িত্ববোধ গঠনে ভূমিকা রাখেন। তাঁর লেখায় প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ঐতিহাসিক তাম্রশাসন, এবং কুমিল্লার গুণাইঘরের বৌদ্ধ ও হিন্দু ঐতিহ্য উঠে আসে, যা তাঁর গবেষণামূলক দৃষ্টিভঙ্গির পরিচায়ক।


সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার মুরাদনগর উপজেলা শাখার সহ-সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। রমজানে আয়োজিত ইফতার মাহফিলে তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে সাংবাদিকদের ঐক্য, নৈতিকতা এবং সমাজে ইতিবাচক ভূমিকা রাখার আহ্বান। তিনি বিশ্বাস করেন, “সাংবাদিকদের ঐক্য ও মানবিক দায়িত্ববোধ সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে।”


একটি ছাত্র আন্দোলনের সময়, রাস্তায় অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের পানির প্রয়োজন দেখা দিলে তিনি  " নিরাপদ চিকিৎসা  চাই ' সংগঠনের সিনিয়র সহ-সভাপতি হিসেবে নিজ উদ্যোগে পানি সরবরাহ করেন। এই মানবিক আচরণ স্থানীয়দের প্রশংসা কুড়ায় এবং তাঁর সামাজিক দায়বদ্ধতার পরিচয় দেয়। তিনি বলেন, “মানবতা আগে, রাজনীতি পরে।”


মমিনুল ইসলাম মোল্লার লেখায় কুমিল্লার ইতিহাস, শিক্ষা, প্রশাসনিক কার্যক্রম এবং মানবিক মূল্যবোধের সমন্বয় দেখা যায়। তাঁর জীবন ও কর্ম কুমিল্লার সাংবাদিকতা ও শিক্ষাক্ষেত্রে একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। তিনি একজন চিন্তাশীল লেখক, যিনি কলমের মাধ্যমে সমাজকে আলোকিত করার চেষ্টা করে চলেছেন।

২০২২ সালের এইচএসসি পরীক্ষর্থীদের সিলেবাস -২য় পর্ব ( মূল্যবোধ,আইন,স্বাধীনতা, সাম্য )

২০২২ সালের এইচএসসি পরীক্ষর্থীদের সিলেবাস -২য় পর্ব ( মূল্যবোধ,আইন,স্বাধীনতা, সাম্য )

 

২০২২ সালের এইচএসসি পরীক্ষর্থীদের সিলেবাস -২য় পর্ব ( মূল্যবোধ,আইন,স্বাধীনতা, সাম্য )

৩য় অধ্যায়-মূল্যবোধ,আইন,স্বাধীনতা ও সাম্য

মূল্যবােধের ধারণা ব্যাখ্যা করতে পারবে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় মূল্যবােধের গুরুত্ব বিশ্লেষণ করতে পারবে আইন  নৈতিকতার সম্পর্ক বিশ্লেষণ করতে পারবে স্বাধীনতা  সাম্যের ধারণা ব্যাখ্যা করতে পারবে আইনস্বাধীনতা  সাম্যের পারস্পরিক সম্পর্ক মূল্যায়ন করতে পারবে স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণে সাম্যের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করতে পারবে গণতান্ত্রিক মূল্যবােধ ব্যাখ্যা করতে পারবে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় মূল্যবােধের গুরুত্ব বিশ্লেষণ করতে পারবে | নিজ জীবনে গণতান্ত্রিক মূল্যবােধ চর্চায় আগ্রহী হবেমূল্যায়ণ করতে পারবে

ডায়াবেটিকস প্রতিরোধে সচেতনতা


ডায়াবেটিস: সচেতনতায় প্রতিরোধ

১৪ ডিসেম্বর বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস উপলক্ষে এসকেএফ প্রথম আলোর তিন দিনের আয়োজনবিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস এবং এর প্রতিপাদ্য প্রথম দিনে অতিথি ছিলেন ডা. ফারহানা আক্তার, সহকারী অধ্যাপক বিভাগীয় প্রধান (এন্ডোক্রাইনোলজি) চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ডা. ফারিয়া আফসানা, সহকারী অধ্যাপক (এন্ডোক্রাইনোলজি) বারডেম জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ছিলেন ডা. বিলকিস ফাতেমাডা. ফারহানা আক্তার জানান, বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস পালন করা হয় মানুষের সচেতনতা তৈরি করার জন্য প্রতিবছর ১৪ নভেম্বর দিবসটি পালিত হয়ে থাকে বিশ্বজুড়ে ডায়াবেটিস ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশন (আইডিএফ) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১৯৯১ সালে ১৪ নভেম্বরকে ডায়াবেটিস দিবস হিসেবে ঘোষণা করে এদিন বিজ্ঞানী ফ্রেডরিক বেন্টিংয়েরও জন্মদিন তিনি বিজ্ঞানী চার্লস বেস্টের সঙ্গে মিলে ইনসুলিন আবিষ্কার করেছিলেন ডা. ফারিয়া আফসানা বলেন, এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ডায়াবেটিস রোগীর সেবায় নার্সরা পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারেন ডা. ফারহানা আক্তার জানান, ডায়াবেটিস চিকিৎসায় ডায়েট, ড্রাগ, ডিসিপ্লিন, এডুকেশন এক্সারসাইজএই পাঁচটি বিষয়কে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে চিকিৎসা করা হয়ে থাকেডা. ফারিয়া আফসানা বলেন, এডুকেটর বা নার্সের ভূমিকা রয়েছে ডায়াবেটিসের চিকিৎসার ক্ষেত্রে কারণ, রোগের চিকিৎসায় জীবনযাপনে পরিবর্তন আনতে হয় খাবারের তালিকা, শারীরিক ব্যায়াম, সেলফ মনিটরিংয়ের মাধ্যমে ডায়াবেটিসের মাত্রা নির্ণয় এবং রোগীর পায়ের যত্ন এসব বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিয়ে একজন নার্স সাহায্য করতে পারেন

ডা. ফারহানা মনে করেন, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস মাত্রার ক্ষেত্রে ঝুঁকি রয়েছে রোগীর তাই এই সমস্যা সম্পর্কে জানতে হবে কোন কোন ক্ষেত্রে জরুরি অবস্থা তৈরি হতে পারে যেমন ডায়াবেটিসের মাত্রা কমে যাওয়া আবার দীর্ঘমেয়াদি জটিলতাও তৈরি হতে পারে রোগীর চোখ, কিডনি, পা, রক্তনালি, হৃদরোগ স্ট্রোক হতে পারে

ডা. ফারিয়া আফসানা জানান, ডায়াবেটিস রোগীর জন্য ডায়াবেটিক এডুকেশন আবশ্যক, নিজের রোগটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে তাহলে সুস্থ থাকা সম্ভব

ডা. ফারহানা প্রেগন্যান্সি ডায়াবেটিস সম্পর্কে বলেন, গর্ভকালীন অবস্থায় যে ডায়াবেটিস প্রথম নির্ণয় করা হয় তাকে আমরা প্রেগন্যান্সি ডায়াবেটিস বলে থাকি

সাধারণত বেশি বয়সে গর্ভবতী এবং যাঁদের ওবেসিটি থাকে, তাঁদের মধ্যে এর প্রবণতা বেশি এর বাইরে পলিসিস্টিক সিনড্রোম থাকলে সম্ভাবনা থাকে যেমন মুখে লোম এবং অনিয়মিত মাসিক গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ফলে বাচ্চা এবরশন, আকৃতি বড়, শ্বাসকষ্ট, জন্মগত ত্রুটির মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে এমনকি বাচ্চার মৃত্যুও হতে পারে আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, এসব বাচ্চার ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ওবেসিটির মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে আর মায়ের ক্ষেত্রে দেখা যায় ডায়াবেটিস ডেভেলপ হওয়া, রক্তচাপ, সিজারের সম্ভাবনা বৃদ্ধি

 

সমস্যার সমাধান হিসেবে তিনি বলেন, ‘ডায়েট কন্ট্রোল করতে হবে এক্সারসাইজ করার আগে অবশ্যই গায়নোকোলোজিস্টের পরামর্শ নিতে হবে

ডা. ফারিয়া আফসানা ডায়াবেটিস চিকিৎসার ধাপ সম্পর্কে জানান, এই চিকিৎসাকে দুই ভাগে ভাগ করা যায় প্রতিরোধ আর চিকিৎসা প্রতিরোধের ক্ষেত্রে ওজন বেশি থাকলে, পরিবারে ডায়াবেটিসের ইতিহাস থাকলে আগে থেকেই সচেতন হতে হবে আর যাঁরা আক্রান্ত তাঁদের সুনিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে জটিলতা এড়াতে পারে সেদিকে সচেতন হতে হবে যাঁরা বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন, তাঁদের প্রতিরোধে সচেতন হতে হবে চিকিৎসার ক্ষেত্রে জীবনযাত্রায় সচেতনতা এবং ইনসুলিনের সঠিক মাত্রার দিকে নজর দিতে হবে

ওবেসিটি সম্পর্কে ডা. ফারহানা বলেন, বিএমআই দ্বারা আমরা সমস্যা নির্ণয় করে থাকি এর ফলে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে যেমন হৃদরোগ, স্ট্রোক, টাইপ টু ডায়াবেটিস, পিত্তথলির পাথর, লিভারে চর্বি, মাসিকে সমস্যা, স্লিপ এপিনিয়া হতে পারে এর বাইরেও রয়েছে বিষণ্নতার সম্ভাবনা যৌন সম্পর্কেও সমস্যা দেখা দেয়

শুধু প্রাপ্তবয়স্ক নয়, বাচ্চাদের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেও নজর দেওয়ার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, খাবারের তালিকা এবং ব্যায়ামে মনোযোগী হতে হবে সঠিক পরিকল্পনা করতে হবে উচ্চ ক্যালোরির খাবার গ্রহণ করতে হবে

 

 

ডা. ফারিয়া আফসানা রোগীদের প্রশ্নের উত্তরে চিকিৎসা সম্পর্কে বলেন, খাদ্যব্যবস্থায় পরিবর্তন বলতে আমরা বুঝি খাদ্যতালিকার সঠিক পরিকল্পনা রিফাইনড সুগার এড়িয়ে চলতে হবে, দিনে খেজুরের মতো একটি মিষ্টি ফল গ্রহণ করতে পারেন চিকিৎসার ক্ষেত্রে ইনসুলিন একটি চিকিৎসা উপকরণ রোগীর দেহের প্রয়োজন অনুযায়ী ওরাল মেডিসিন ইনসুলিনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়

 

ডা. ফারিয়া আফসানা, সহকারী অধ্যাপক (এন্ডোক্রাইনোলজি), বারডেম জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা

ডা. ফারিয়া আফসানা, সহকারী অধ্যাপক (এন্ডোক্রাইনোলজি), বারডেম জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকাছবি: ফেসবুক

প্রসঙ্গক্রমে, ডা. ফারহানা আক্তার কিটো ডায়েট সম্পর্কে বলেন, ক্ল্যাসিক্যাল কিটো ডায়েটের ক্ষেত্রে % শর্করা, ৭৫% ফ্যাট এবং বাকিটা প্রোটিন এই ধরনের লো শর্করা ডায়েটের ফলে রোগীর হৃদরোগ এবং ক্যানসারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায় বলে বিভিন্ন গবেষণায় জানা যায় ধরনের ডায়েটের ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিকভাবে ওজন, ডায়াবেটিসের মাত্রা, রক্তচাপ কমে গেলেও খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে যায় ফলে মৃত্যুঝুঁকি বাড়ে তিনি আরও উল্লেখ করেন, কিটো ডায়েটের গবেষণার শেষ লাইনে বলা হয়েছেইট ইজ আনসেফ

 

কোলেস্টেরলের সঙ্গে সুগারের সম্পর্ক আছে কি না? দর্শকের এই প্রশ্নের উত্তরে ডা. ফারিয়া আফসানা বলেন, সুগার ব্যালান্সের মাধ্যমে কোলেস্টেরলের মাত্রার সম্পর্ক রয়েছে কোলেস্টেরল বেশি থাকলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও বাড়ে

 

বুকের দুধে অভ্যস্ত শিশুর মা কয়েক দিন ইনসুলিন না নিলে কোনো সমস্যা হবে কি না? এমন প্রশ্নের উত্তরে ডা. ফারহানা আক্তার বলেন, ক্ষেত্রে বাচ্চার সমস্যা না হলেও মায়ের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে

 

ডা. ফারহানা আক্তার দর্শকদের উদ্দেশে বলেন, ‘রোগীকে সচেতন হতে হবে নিয়মিত ফলোআপ করতে হবে ডায়াবেটিসের গড় পরিমাপ করে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে এবং ডা. ফারিয়া আফসানা দর্শকদের উদ্দেশে বলেন, প্রতিরোধে সচেতন হতে হবে তাহলে সুস্থতা সম্ভব

যে ১০টি লক্ষণ দেখলে ডায়াবেটিস রোগের পরীক্ষা করাতে হবে

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘদিন ডায়াবেটিস অশনাক্ত থাকলে বা চিকিৎসা না হলে কিডনি, লিভার, চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেই সঙ্গে শরীরের ত্বক নষ্ট হয়ে যায়, চুল পড়ে যায়। শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গও ক্ষতির শিকার হতে পারে।

মি. সাইফুদ্দিন বলছেন, ''যারা যত বেশি শারীরিক পরিশ্রম করবেন, প্রতিদিন যদি অন্তত ১০ হাজার কদম কেউ হাঁটেন, তাহলে ডায়াবেটিক হলেও সেটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকবে। কিন্তু সেটা কতজন করেন?''

তিনি পরামর্শ দিয়ে বলেন, ''কেউ ডায়াবেটিক হলে অবশ্যই তার জীবনযাপনে অবশ্যই পরিবর্তন আনতে হবে।''



ছবির উৎসডায়াবেটিস হয়েছে, সেটা দীর্ঘদিন বুঝতেই পারেননি আফরোজা আক্তার। কিন্তু কোন ''অনেকদিন ধরে শরীরে খারাপ লাগছে দেখে একজন মেডিসিনের ডক্টরের কাছে গিয়েছিলাম। তিনি আরও কিছু পরীক্ষানিরীক্ষার সঙ্গে ডায়াবেটিসের পরীক্ষাও দিয়েছিলেন। সেখানেই ধরা পড়ে, আমার নাকি অনেকদিন ধরেই ডায়াবেটিস হয়ে গেছে।''

তিনি বলছিলেন, এরপর ডায়াবেটিস হাসপাতালে পরীক্ষা নিরীক্ষার করিয়ে ওষুধ খাওয়া শুরু করেন।

তিনি একাই নন, ডায়াবেটিক বিশেষজ্ঞদের মতে বাংলাদেশে ডায়াবেটিক আক্রান্তদের ৫০ শতাংশের বেশি মানুষ টের পাননা যে তারা এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।অন্য কোন রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে গিয়ে তাদের রোগটি ধরা পড়েবাংলাদেশে নারীদের মধ্যে ডায়াবেটিস কেন বাড়ছে?

বাংলাদেশের ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ. কে. আজাদ খান বলেন, ''ডায়াবেটিস আছে এমন রোগীদের অন্তত ৫০ শতাংশ জানেন না যে, তার ডায়াবেটিস আছে। এ কারণে ডায়াবেটিস সম্পর্কে সবার সচেতনতা বৃদ্ধি খুব জরুরি।''

জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান (নিপোর্ট)-এর একটি জরিপে দেখা গেছে, দেশে মোট ডায়াবেটিস আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা এক কোটি ১০ লাখ। এদের মধ্যে ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সীদের সংখ্যা ২৬ লাখ আর ৩৫ বছরের বেশি বয়সীদের সংখ্যা ৮৪ লাখ।

বাংলাদেশের ডায়াবেটিক সমিতির মহাসচিব মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ''যাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকে, তারা প্রথমদিকে এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি বুঝতে পারেন না। কারণ এটা হচ্ছে ধীরগতির ঘাতক। যার হয়েছে, সেদিনই তাকে বিপদে ফেলবে না, কিন্তু আস্তে আস্তে তার শরীরের ক্ষয় করে দেবে।''


রিফাইন করা চিনি এড়িয়ে চলতে হবে।

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

ছবির ক্যাপশান,

রিফাইন করা চিনি এড়িয়ে চলতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টাইপ-২ ধরণের ডায়াবেটিসের ৭৫ শতাংশ ক্ষেত্রেই আগেভাগে সতর্ক থাকলে, শারীরিক পরিশ্রম করলে এবং খাদ্যাভ্যাস, জীবনযাপনে নিয়ন্ত্রণ আনলে ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব। কিন্তু একবার ডায়াবেটিস হয়ে গেলে আর এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় না।

যে সব লক্ষণ দেখলে সতর্ক হতে হবে:

  • ঘনঘন প্রস্রাব হওয়া ও পিপাসা লাগা
  • দুর্বল লাগা' ঘোর ঘোর ভাব আসা
  • ক্ষুধা বেড়ে যাওয়া
  • সময়মতো খাওয়া-দাওয়া না হলে রক্তের শর্করা কমে হাইপো হওয়া
  • মিষ্টি জাতীয় জিনিসের প্রতি আকর্ষণ বেড়ে যাওয়া
  • কোন কারণ ছাড়াই অনেক ওজন কমে যাওয়া
  • শরীরে ক্ষত বা কাটাছেঁড়া হলেও দীর্ঘদিনেও সেটা না সারা
  • চামড়ায় শুষ্ক, খসখসে ও চুলকানি ভাব
  • বিরক্তি ও মেজাজ খিটখিটে হয়ে ওঠা
  • চোখে কম দেখতে শুরু করা
দু'ধরণের নয়, ডায়াবেটিস আসলে পাঁচ ধরণের - বলছেন গবেষকরা

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

ছবির ক্যাপশান,

দু'ধরণের নয়, ডায়াবেটিস আসলে পাঁচ ধরণের - বলছেন গবেষকরা

কাদের ঝুঁকি বেশি

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যাদের বাবা-মা, ভাই-বোন বা ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজনদের ডায়াবেটিস রয়েছে, তাদের এই রোগটিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি রয়েছে।

এছাড়া যারা নিয়মিত হাঁটাচলা বা শারীরিক পরিশ্রম করেন না, অলস বা অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করেন, তাদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি।

এছাড়া নারীদের গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস রোগ হতে পারে।

যাদের হৃদরোগ রয়েছে, রক্তে কোলেস্টেরল বেশি, উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে, তাদেরও এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

যেসব শিশুর ওজন বেশি, যাদের বাবা-মা, ভাই-বোন, দাদা-দাদী, নানা-নানী বা ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজনের ডায়াবেটিস রয়েছে, যাদের মায়ের গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস হয়েছিল, সেই সব শিশুর ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

বিশ্ব জুড়েই ডায়াবেটিস একটি বড় স্বাস্থ্য সমস্যা

ছবির উৎস,GETTY IMAGES

ছবির ক্যাপশান,

বিশ্ব জুড়েই ডায়াবেটিস একটি বড় স্বাস্থ্য সমস্যা

কী করতে হবে?

বাংলাদেশের ডায়াবেটিক সমিতির মহাসচিব মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন বলছেন, যাদের ঝুঁকি রয়েছে, তাদের অবশ্যই বছরে একবার ডায়াবেটিস পরীক্ষা করাতে হবে।

এজন্য সবসময় হাসপাতালে যেতে হবে এমন নয়। এখন অনেক ফার্মেসিতে স্বল্পমূল্যে দ্রুত ডায়াবেটিস পরীক্ষা করা যায়। সেখান ডায়াবেটিস শনাক্ত হলে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

যাদের শিশুর ঘনিষ্ঠ স্বজনদের ডায়াবেটিসের ইতিহাস রয়েছে, তাদেরকেও বছরে অন্তত একবার করে পরীক্ষা করাতে হবে।

মি. সাইফুদ্দিন বলছেন, ''ডায়াবেটিস যত তাড়াতাড়ি শনাক্ত করা যাবে, সেই রোগীর জন্য সেটা ততো ভালো। তাতে তিনি যেমন রোগটির চিকিৎসা দ্রুত শুরু করতে পারবেন, পাশাপাশি তার জীবনযাপনও একটি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে চলে আসবে।''