ডায়াবেটিকস প্রতিরোধে সচেতনতা


ডায়াবেটিস: সচেতনতায় প্রতিরোধ

১৪ ডিসেম্বর বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস উপলক্ষে এসকেএফ প্রথম আলোর তিন দিনের আয়োজনবিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস এবং এর প্রতিপাদ্য প্রথম দিনে অতিথি ছিলেন ডা. ফারহানা আক্তার, সহকারী অধ্যাপক বিভাগীয় প্রধান (এন্ডোক্রাইনোলজি) চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ডা. ফারিয়া আফসানা, সহকারী অধ্যাপক (এন্ডোক্রাইনোলজি) বারডেম জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ছিলেন ডা. বিলকিস ফাতেমাডা. ফারহানা আক্তার জানান, বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস পালন করা হয় মানুষের সচেতনতা তৈরি করার জন্য প্রতিবছর ১৪ নভেম্বর দিবসটি পালিত হয়ে থাকে বিশ্বজুড়ে ডায়াবেটিস ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশন (আইডিএফ) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ১৯৯১ সালে ১৪ নভেম্বরকে ডায়াবেটিস দিবস হিসেবে ঘোষণা করে এদিন বিজ্ঞানী ফ্রেডরিক বেন্টিংয়েরও জন্মদিন তিনি বিজ্ঞানী চার্লস বেস্টের সঙ্গে মিলে ইনসুলিন আবিষ্কার করেছিলেন ডা. ফারিয়া আফসানা বলেন, এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ডায়াবেটিস রোগীর সেবায় নার্সরা পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারেন ডা. ফারহানা আক্তার জানান, ডায়াবেটিস চিকিৎসায় ডায়েট, ড্রাগ, ডিসিপ্লিন, এডুকেশন এক্সারসাইজএই পাঁচটি বিষয়কে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে চিকিৎসা করা হয়ে থাকেডা. ফারিয়া আফসানা বলেন, এডুকেটর বা নার্সের ভূমিকা রয়েছে ডায়াবেটিসের চিকিৎসার ক্ষেত্রে কারণ, রোগের চিকিৎসায় জীবনযাপনে পরিবর্তন আনতে হয় খাবারের তালিকা, শারীরিক ব্যায়াম, সেলফ মনিটরিংয়ের মাধ্যমে ডায়াবেটিসের মাত্রা নির্ণয় এবং রোগীর পায়ের যত্ন এসব বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিয়ে একজন নার্স সাহায্য করতে পারেন

ডা. ফারহানা মনে করেন, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস মাত্রার ক্ষেত্রে ঝুঁকি রয়েছে রোগীর তাই এই সমস্যা সম্পর্কে জানতে হবে কোন কোন ক্ষেত্রে জরুরি অবস্থা তৈরি হতে পারে যেমন ডায়াবেটিসের মাত্রা কমে যাওয়া আবার দীর্ঘমেয়াদি জটিলতাও তৈরি হতে পারে রোগীর চোখ, কিডনি, পা, রক্তনালি, হৃদরোগ স্ট্রোক হতে পারে

ডা. ফারিয়া আফসানা জানান, ডায়াবেটিস রোগীর জন্য ডায়াবেটিক এডুকেশন আবশ্যক, নিজের রোগটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে তাহলে সুস্থ থাকা সম্ভব

ডা. ফারহানা প্রেগন্যান্সি ডায়াবেটিস সম্পর্কে বলেন, গর্ভকালীন অবস্থায় যে ডায়াবেটিস প্রথম নির্ণয় করা হয় তাকে আমরা প্রেগন্যান্সি ডায়াবেটিস বলে থাকি

সাধারণত বেশি বয়সে গর্ভবতী এবং যাঁদের ওবেসিটি থাকে, তাঁদের মধ্যে এর প্রবণতা বেশি এর বাইরে পলিসিস্টিক সিনড্রোম থাকলে সম্ভাবনা থাকে যেমন মুখে লোম এবং অনিয়মিত মাসিক গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ফলে বাচ্চা এবরশন, আকৃতি বড়, শ্বাসকষ্ট, জন্মগত ত্রুটির মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে এমনকি বাচ্চার মৃত্যুও হতে পারে আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, এসব বাচ্চার ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ওবেসিটির মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে আর মায়ের ক্ষেত্রে দেখা যায় ডায়াবেটিস ডেভেলপ হওয়া, রক্তচাপ, সিজারের সম্ভাবনা বৃদ্ধি

 

সমস্যার সমাধান হিসেবে তিনি বলেন, ‘ডায়েট কন্ট্রোল করতে হবে এক্সারসাইজ করার আগে অবশ্যই গায়নোকোলোজিস্টের পরামর্শ নিতে হবে

ডা. ফারিয়া আফসানা ডায়াবেটিস চিকিৎসার ধাপ সম্পর্কে জানান, এই চিকিৎসাকে দুই ভাগে ভাগ করা যায় প্রতিরোধ আর চিকিৎসা প্রতিরোধের ক্ষেত্রে ওজন বেশি থাকলে, পরিবারে ডায়াবেটিসের ইতিহাস থাকলে আগে থেকেই সচেতন হতে হবে আর যাঁরা আক্রান্ত তাঁদের সুনিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে জটিলতা এড়াতে পারে সেদিকে সচেতন হতে হবে যাঁরা বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন, তাঁদের প্রতিরোধে সচেতন হতে হবে চিকিৎসার ক্ষেত্রে জীবনযাত্রায় সচেতনতা এবং ইনসুলিনের সঠিক মাত্রার দিকে নজর দিতে হবে

ওবেসিটি সম্পর্কে ডা. ফারহানা বলেন, বিএমআই দ্বারা আমরা সমস্যা নির্ণয় করে থাকি এর ফলে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে যেমন হৃদরোগ, স্ট্রোক, টাইপ টু ডায়াবেটিস, পিত্তথলির পাথর, লিভারে চর্বি, মাসিকে সমস্যা, স্লিপ এপিনিয়া হতে পারে এর বাইরেও রয়েছে বিষণ্নতার সম্ভাবনা যৌন সম্পর্কেও সমস্যা দেখা দেয়

শুধু প্রাপ্তবয়স্ক নয়, বাচ্চাদের স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রেও নজর দেওয়ার তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, খাবারের তালিকা এবং ব্যায়ামে মনোযোগী হতে হবে সঠিক পরিকল্পনা করতে হবে উচ্চ ক্যালোরির খাবার গ্রহণ করতে হবে

 

 

ডা. ফারিয়া আফসানা রোগীদের প্রশ্নের উত্তরে চিকিৎসা সম্পর্কে বলেন, খাদ্যব্যবস্থায় পরিবর্তন বলতে আমরা বুঝি খাদ্যতালিকার সঠিক পরিকল্পনা রিফাইনড সুগার এড়িয়ে চলতে হবে, দিনে খেজুরের মতো একটি মিষ্টি ফল গ্রহণ করতে পারেন চিকিৎসার ক্ষেত্রে ইনসুলিন একটি চিকিৎসা উপকরণ রোগীর দেহের প্রয়োজন অনুযায়ী ওরাল মেডিসিন ইনসুলিনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়

 

ডা. ফারিয়া আফসানা, সহকারী অধ্যাপক (এন্ডোক্রাইনোলজি), বারডেম জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা

ডা. ফারিয়া আফসানা, সহকারী অধ্যাপক (এন্ডোক্রাইনোলজি), বারডেম জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকাছবি: ফেসবুক

প্রসঙ্গক্রমে, ডা. ফারহানা আক্তার কিটো ডায়েট সম্পর্কে বলেন, ক্ল্যাসিক্যাল কিটো ডায়েটের ক্ষেত্রে % শর্করা, ৭৫% ফ্যাট এবং বাকিটা প্রোটিন এই ধরনের লো শর্করা ডায়েটের ফলে রোগীর হৃদরোগ এবং ক্যানসারের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায় বলে বিভিন্ন গবেষণায় জানা যায় ধরনের ডায়েটের ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিকভাবে ওজন, ডায়াবেটিসের মাত্রা, রক্তচাপ কমে গেলেও খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেড়ে যায় ফলে মৃত্যুঝুঁকি বাড়ে তিনি আরও উল্লেখ করেন, কিটো ডায়েটের গবেষণার শেষ লাইনে বলা হয়েছেইট ইজ আনসেফ

 

কোলেস্টেরলের সঙ্গে সুগারের সম্পর্ক আছে কি না? দর্শকের এই প্রশ্নের উত্তরে ডা. ফারিয়া আফসানা বলেন, সুগার ব্যালান্সের মাধ্যমে কোলেস্টেরলের মাত্রার সম্পর্ক রয়েছে কোলেস্টেরল বেশি থাকলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও বাড়ে

 

বুকের দুধে অভ্যস্ত শিশুর মা কয়েক দিন ইনসুলিন না নিলে কোনো সমস্যা হবে কি না? এমন প্রশ্নের উত্তরে ডা. ফারহানা আক্তার বলেন, ক্ষেত্রে বাচ্চার সমস্যা না হলেও মায়ের সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে

 

ডা. ফারহানা আক্তার দর্শকদের উদ্দেশে বলেন, ‘রোগীকে সচেতন হতে হবে নিয়মিত ফলোআপ করতে হবে ডায়াবেটিসের গড় পরিমাপ করে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চলতে হবে এবং ডা. ফারিয়া আফসানা দর্শকদের উদ্দেশে বলেন, প্রতিরোধে সচেতন হতে হবে তাহলে সুস্থতা সম্ভব

Previous Post
Next Post
Related Posts

0 Comments: